প্রকাশিত: ২৭/১১/২০১৭ ২:২২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:২৮ এএম
রাখাইন রাজ্যে পুড়ে যাওয়া এক গ্রামের ছবি তুলছে ও ভিডিও করছে এক রোহিঙ্গা মোবাইল রিপোর্টার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

রাখাইন রাজ্যে পুড়ে যাওয়া এক গ্রামের ছবি তুলছে ও ভিডিও করছে এক রোহিঙ্গা মোবাইল রিপোর্টার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরা ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের দেশটির সেনাবাহিনী গুম বা হত্যা করছে বলে মানবাধিকার গ্রুপগুলো আশঙ্কা করছে।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সংবাদ যেসব রিপোর্টাররা করেছেন, তারাই গুম হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র স্মার্টফোনের মাধ্যমে গোপনে ধারণ করতেন তরুণ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে এসব অডিও-ভিডিও ও ছবি তারা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিত।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করেছে, রিপোর্টারদের এই নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে অনেক সাংবাদিককে হত্যা ও গুম করেছে। এর ফলে রুদ্ধ রাখাইন রাজ্যে কি হচ্ছে তা এখন খুব সামান্যই জানা যাচ্ছে।

মোহাম্মদ রফিক নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই রাখাইনের এই মোবাইল সাংবাদিকদের শতকরা ৯৫ জনের কোনো খোঁজ নেই। তিনি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সংবাদ পোর্টাল ‘দ্য স্টেটলেসের’ সম্পাদক।

রফিক বলেন, বার্মার সেনাবাহিনী ও রাখাইনের মিলিশিয়ারা এখনো রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গা মোবাইল প্রতিবেদকদের নেটওয়ার্ক এখন আর কাজ করছে না। তাই বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন তৈরিতে সহিংসতার বিস্তারিত তথ্যগুলো আমাদের কাছে আর আসছে না।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও রোহিঙ্গা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের খবরগুলো পেত। তারাসহ আমাদের সংবাদমাধ্যগুলোও এখন রাখাইনের খবর খুব কম পাচ্ছে।

২০১২ সালে যখন রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে সেনা মোতায়েন করে। সে সময়ও অভিযোগ উঠে যে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

সহিংসতার খবর নিয়ে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমগুলোর নিরবতার কারণে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা ছদ্মবেশী সিটিজেন রিপোর্টারদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এর পর তারা সহিংসতার ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করে দেশটির বাইরে পাঠানো শুরু করে। যদিও সেগুলো বেশিরভাগই রোহিঙ্গাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতো।

বাংলাদেশভিত্তিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুখপাত্র কো কো লিন জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে দুই হাজার মোবাইল প্রতিবেদক রাখাইনে সক্রিয় ছিল। গত বছর রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় তারা গ্রামগুলোতে সহিংসতার বিস্তারিত সংবাদ সংগ্রহ করতো।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা যে সহিংসতা চালাচ্ছে তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তা জানতে পেরেছে।

মোবাইল রিপোর্টররা কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতেন তার বিবরণ দিয়েছেন সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নুর হোসেন (২৫) নামে এক মোবাইল রিপোর্টার। তিনি বলেন, তারা এই সব তথ্য সংগ্রহের জন্য অবিশ্বাস্যরকমের ঝুঁকি নিতেন।

নুর হোসেন বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী যখন আমাদের গ্রামে প্রবেশ করতো তখন আমরা লুকিয়ে পড়তাম। তারা যখন অভিযান শেষ করে ফিরে যেত তখন আমরা বের হয়ে ঘটনাস্থলের ছবি, নির্যাতনের চিত্র ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতাম এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো পাঠিয়ে দিতাম। সূত্র: গার্ডিয়ান

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...